বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই, ২০১৩

কিশোরগঞ্জে রথযাত্রা

কিশোরগঞ্জে তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে ঐতিহাসিক রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জেলা শহরের পরমেশ্বর ভগবান জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা শ্রী শ্রী গোপীনাথ জিউরআখড়া প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়। পরে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শ্রী শ্রী কালীবাড়ী অঙ্গনে এসে রথযাত্রা শেষ হয়। অপরদিকে আরেকটি রথযাত্রা শহরের শ্রী শ্রী কালীবাড়ী প্রাঙ্গণ থেকে বত্রিশ অজয় দাস ফাউন্ডেশনে গিয়ে শেষ হয়। গতকাল বুধবার বিকেলে রথযাত্রায় নেতৃত্বে দেন তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ইয়াসির উসমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক সিদ্দিকুর রহমান, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তন্ময় দাস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুব্রত পাল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এম.এ. আফজল, পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন অ্যাডভোকেট, সাধারণ সম্পাদক সুজিত সরকার সুবল প্রমুখ। পরে শ্রী শ্রী কালীবাড়ী প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে ৫শ’ বৎসরের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা কটিয়াদী উপজেলার গোপীনাথ বাড়ীতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ৭ দিনব্যাপী এ রথযাত্রায় জেলার বিভিন্ন স্থানসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে পূণ্যার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। 
ইতিহাস থেকে জানাযায়, কটিয়াদী উপজেলার ভোগবেতাল গ্রামে অবস্থিত প্রতœতত্ত্বের নিদর্শন ঈশা খাঁ ও রাজা নবরঙ্গের ঐতিহাসিক হিন্দু ধর্মের তীর্থস্থান শ্রী শ্রী গোপীনাথ মন্দীর। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমার্ধে সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায় এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রাজা স্বপ্নদৃষ্ট হয়ে কোঠামনি দিঘী ও বাউল সাগর নামে ব্রহ্মপুত্র নদীর তীর থেকে কৃষ্ণবর্ণের দু’টি নিম কাঠের খ- দিয়ে গোপীনাথ বলরাম ও শুভদ্রার মূর্তি তৈরি করে মন্দিরে স্থাপন করে। কিন্তু এর সংস্কার করেন ঈশা খাঁ এবং জায়গাটির নাম দেন ভোগবেতাল। কিংবদন্তীতে আছে ঈশা খাঁ উক্ত জায়গাটি সংস্কার করেন এবং জরাজীর্ণ মন্দিরটি তার রাজধানী মানান নগরীর নক্সায় নির্মাণ করেন। সে থেকে প্রতি বছর আষাঢ় মাসে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা, উল্টো রথযাত্রা, দুল পূর্ণিমা, শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী, শিবরাত্রী ব্রত, ঝুলন যাত্রা ও বাসন্তী পূজাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান গোপীনাথ মন্দিরে হয়ে আসছে। এ মন্দিরে রথযাত্রা শুরু হয় ১৫৮৫ খ্রি. সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায়ের সময় থেকে। কথিত আছে, জগন্নাথ বঙ্গের গোপীনাথ তার বিশাল মেলা এ অঞ্চলের বৃহত্তর মেলা হওয়ায় হাওর অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পূণ্যার্থীরা নৌকা ও বজরায় করে এখানে সমবেত হতেন। ১৫ দিনব্যাপী এ মেলার আয়ুষ্কাল ছিল। ১শ’ ৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট ৩২ চাকার রথটি স্থানীয় জমিদারদের পোষা হাতি দিয়ে গোপীনাথ মন্দির থেকে টেনে প্রায় ২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক পথ দিয়ে ভক্তবৃন্দ গু-িচা বাড়ীতে (শ্বশুড় বাড়ী) আনা হত, ৮ দিন পর উল্টো রথের মাধ্যমে রথটি নিয়ে যাওয়া হত। সেই স্মৃতি আজও স্থানীয় লোকজন ৫শ’ বছর যাবত পালন করে আসছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন