সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৩

একজন বাঙালী আমেরিকানও হতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট

কিশোরগঞ্জ পাতাঃ-  যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আরও বেশি করে সম্পৃক্ত হতে বাঙালী কমিউনিটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ড্যানিয়েল ড্রম। নিউইয়র্কে বাঙালী অধ্যুসিত কুইন্স ডিস্ট্রিক্টের কাউন্সিল মেম্বার ও নিউইয়র্ক সিটি ইমিগ্রেশন কমিটির চেয়ারপার্সন ড্রমের সঙ্গে তার জ্যকসন হাইটস্থ অফিসে কথা হয় প্রতিবেদকের সাথে । ড্রম বলেন, আমি মনে করি একদিন একজন বাঙালী আমেরিকানও হতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।

বাঙালী কমিউনিটির বিভিন্ন সম্ভাবনার দিকগুলো নিয়ে বথা বলেন এই জনপ্রিয় কাউন্সিল মেম্বার।

বাঙালী কমিউনিটির সবচেয়ে উজ্জ্বল দিক চিহ্নিত করতে গিয়ে তিনি বলেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এদেশে বড় হয়ে ওঠা বাঙালী শিশু-কিশোর তথা নতুন প্রজন্মের শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া। নিজের দীর্ঘ স্কুল শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে ড্রম বলেন, আমরা দেখেছি বাঙালী শিশুরা স্কুলগুলোতে অনেক ভালো করছে। আর খতিয়ে দেখেছি এর প্রধান কারণই হচ্ছে পারিবারিক পর্যায় থেকে তাদের শিক্ষা-দিক্ষার বিয়য়ে কড়া নজর। তিনি বলেন, সন্তানদের কাছে বাবা-মায়ের বড় প্রত্যাশা থাকে এবং শিশুরাও তা পূরণ কছে। আর বাঙালী কমিউনিটির জন্য সেটাই একটা চমৎকার বিষয়।

বাঙালী কমিউনিটির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, বলেন ড্যানিয়েল ড্রম। তিনি বলেন, অনেক বাঙালী এখানে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। জ্যাকসনহাইটস, অ্যাস্টোরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে তাদের হাতেই সক্রিয় হচ্ছে অর্থনীতির চাকা । তবে কাজের ক্ষেত্রে আরও ভালো ভালো কাজ পেতে বাঙালী সচেষ্ট হতে হবে। ড্রম বলেন, অনেক বাংলাদেশি এই দেশে অনেক বড় প্রত্যাশা ও স্বপ্ন নিয়ে আসেন। একটি ভালো কাজ পাওয়ার স্বপ্নটিই তাদের কাছে বড় হয়ে থাকে। কিন্তু কখনো কখনো তাদের অপেক্ষাকৃত কম মানের কাজ করতে হয়, অথচ দেশে তারা এর চেয়ে অনেক বেশি উন্নত ও অনেক বেশি সম্মানজনক কাজ করে এসেছেন। এদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছার পর কিছু কোর্স করে নেওয়ার পরামর্শ দেন ড্যানিয়েল ড্রম। ভাষার বাধাকে একটি বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, ইংরেজি ভাষা শিক্ষা, অ্যাকাউন্টিং, আইটিসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিলেই তারা ভালো কাজ পেতে পারেন। এ প্রসঙ্গে তিনি ইউথ কংগ্রেস অব বাঙালী আমেরিকানস আয়োজিত কুইকবুক প্রশিক্ষণ কোর্সের কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এ ধরনের উদ্যোগে সহায়তা দিতেও তিনি প্রস্তুত। ড্রম বলেন, এই কোর্সে অংশগ্রহণ করছে অনেক বাঙালী । এর মানেই হচ্ছে, তারা ভালো কাজ পেতে অপেক্ষাকৃত বেশি বেতনের কাজ পেতে আগ্রহী। বাঙালী কমিউনিটিকে অত্যন্ত পরিশ্রমী একটি কমিউনিটি হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
তবে নিজেরা বড় ও ভালো থাকলেই চলবে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ধারায় বাংলাদেশিদের এগিয়ে আসতে হবে এই মত দিয়ে ড্যানিয়েল ড্রম বলেন, এ জন্য সবচেয়ে আগে দরকার বাংলাদেশিদের এই দেশে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হওয়া।

জনসংখ্যা জরিপে অনেক বাঙালী তালিকাভুক্ত হতে চায় না এমন একটি প্রবণতা রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাঙালী কেবল নয়, অন্যান্য ইমিগ্র্যান্ট কমিউনিটির মধ্যে এমন একটি প্রবনতা আমরা দেখছি। তবে এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, বাঙালী অভিবাসী এখানে কতটা রয়েছে তা আমরা জ্যাকসন হাইটস, অ্যাস্টোরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরলেই আন্দাজ করতে পারি। সে তুলনায় জনসংখ্যা গণনায় তাদের অন্তর্ভূক্তি অনেক কম। আমরা শুনেছি সেনসাস কর্মীরা ঘরে দরজায় হাজির হলেও অনেকে দরজা খুলে নিজেদের তালিকাভুক্ত করান না। যেটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। তালিকাভুক্ত না হলে আপনি ভোট দিতে পারবেন না, আর ভোট দিতে না পারলে আপনার প্রত্যাশার কোনো মূল্যই থাকবে না, বলেন ড্যানিয়েল ড্রম।

তিনি বলেন, কমিউনিটির জন্য কোনো তহবিল বরাদ্দ করতে হলে তা এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেই হয়। কুইন্সে ৪০ শতাংশ ল্যাটিনো, ২০ শতাংশ শেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী এবং বাকি ৪০ শতাংশ এশীয়দের বাস বলে জানান তিনি। ড্রম বলেন, অদূর ভবিষ্যতে এখানে থেকে কোনো একজন এশিয়ান আমেরিকানই নির্বাচিত হবেন এবং প্রতিনিধিত্ব করবেন এটাই প্রত্যাশিত।

কেবল রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েই নয় এখানকার বিভিন্ন উদ্যোগের সঙ্গে থেকেও নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারেন বাঙালীরা বলেন ড্যানিয়েল ড্রম। তিনি এ প্রসঙ্গে মনজুর চৌধুরী নামে এক বাঙালী যুবকের কথাও উল্লেখ করে বলেন, উদ্যমী ও উদ্যোগী এই যুবক ডেমোক্রেটিক ক্লাবের পরিচালনা পর্ষদের একজন সদস্য। এখন তিনি নির্বাচিত হয়েছেন কুইন্স কাউন্টি ডেমোক্রেটিক অরগাইজেশনের জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে। নিউইয়র্ক সিটি সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নির্বাচনে তার সিদ্ধান্তও গুরুত্ব পাবে। ড্যানিয়েল ড্রম বলেন, এভাবেই বাঙালী কমিউনিটির যুবকরা এগিয়ে এলে তারা ধীরে ধীরে অবস্থান তৈরি করে নিতে পারবে।  

বাঙালী কমিউনিটিকে শিক্ষা, ব্যবসা ও রাজনীতি তিনটি ক্ষেত্রেই আরও জোর দেওয়ার আহবান জানান এই কাউন্সিল মেম্বার।

ড্যানিয়েল ড্রম বলেন, আমি জানি দেশের রাজনীতি থেকে দূরে সরে থাকা যায় না। আমরাও পারিনা। আমি চতুর্থ প্রজন্মের আইরিশ-আমেরিকান। তারপরেও উত্তর আয়ারল্যান্ডে যে সংঘাত চলছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে এখন আমাকে এখানকার রাজনীতি নিয়েই বেশি ভাবতে হয়। বাঙালী রাজনীতিতে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা নিয়ে বাঙালীদের ও খোঁজ রাখতে হবে। এখানে কংগ্রেসে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ককাসে জো ক্রাউলি রয়েছেন তাকে বিষয়গুলো জানাতে হবে। তবে দেশের রাজনীতির চর্চা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে খুব একটা না করে এখানকার রাজনীতিতে নিজেদের বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। বাঙালী যত দ্রুত সেটা করতে পারবে ততই তাদের এখানে অগ্রসর নিশ্চিত হবে। এতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হবে। এবং প্রকারান্তরে আমরা একজন বাঙালী আমেরিকানকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে পাবো।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন