বুধবার, ৭ আগস্ট, ২০১৩

কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের প্রস্তুতি শেষের পথে

শুভ সি এইচ দেব (কিশোরগঞ্জ পাতা) ঃ  উপমহাদেশের বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহে । সারা দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ ঈদের নামাজ আদায় করতে চলে আসেন শোলাকিয়ায়। প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার জন্য আগের দিন থেকে অনেকে মাঠে অবস্থান করে । ঈদের দিন ভোর থেকে লোকজনের ব্যাপক আগমণ ঘটতে থাকে। 

উপমহাদেশের বৃহত্তম এ ঈদ জামাত নিজের চোখে না দেখে অনুমান করা সম্ভব নয়। এখানে জামাত পড়তে এসে অনেকেই উঠে থাকেন হোটেলে। তাছাড়া এখানকার লোকদের আতিথেয়তাও ভরপুর । 

এই বৃহৎ ঈদ জামাতে শরীক হতে মধ্যপ্রাচ্য সহ বিভিন্ন মুসলিম প্রধান দেশ থেকেও অনেকে হাজির হন এখানে। কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা উৎসবমুখর পরিবেশে দলে দলে ছুটে আসেন শোলাকিয়া ঈদগাহ্ মাঠে ঈদের জামাত আদায় করার জন্য। 

জামাতে মুসল্লী যত বেশি হয়, সওয়াবও তত বেশি হয় এবং গুণা মাফ হয় এ বিশ্বাস থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা নামাজ পড়তে আসেন শোলাকিয়ায়। 

প্রায় আড়াইশ বছরের পুরনো এই ঈদগাহটি ঐতিহ্যের তুলনায় উন্নয়ন ও সংস্কারের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। প্রতি বছরই এ সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলা প্রশাসনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকসহ প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক মুসল্লী এ জামাতে অংশ গ্রহণ করেন।
এবার শোলাকিয়া ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের জামাতটি হবে ১৮৬ তম জামাত। এবারের জামাত সফল করার লক্ষ্যে 
গতকাল কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় ঈদ জামাতের চূড়ান্ত প্রস্তুতির ব্যাপারে আলোচনা করা হয় এবং প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠের সার্বিক নিরাপত্তা, উন্নয়ন, মুসল্লীদের যাতায়াতের সুবিধা, অজুর সুব্যবস্থা, খাবার পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, মেডিকেল টিম স্থাপন ও মাঠে নামাজের জন্য মাইকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জেলার বিভিন্ন সরকারি বিভাগগুলোকে। তার মধ্যে জেলা পুলিশ প্রশাসন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ, কিশোরগঞ্জ পৌরসভা, স্থানীয় সরকার বিভাগ, জনস্বাস্থ্য, ফায়ার সার্ভিস, জেলা স্কাউট ও জেলা তথ্য বিভাগকে বিশেষ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এবারের জামাতে ইমামতি করার কথা রয়েছে বেসরকারি সেচ্ছাসেবী সংস্থা ইসলাহুল মুসলিমীন পরিষদ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির একাংশের মহাসচিব মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের। যিনি গত চার ধরে শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। 

এর আগে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে কিশোরগঞ্জ হয়বত নগর এ.ইউ. কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলান আবুল খায়ের মোঃ নুরুল্লাহ্ (রহ.) সুদীর্ঘ ২৯ বছর শোলাকিয়া ঈদগাহে ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তিতে ২০০৪ সালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তার ছেলে কিশোরগঞ্জ বড় বাজার জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল খায়ের মোঃ ছাইফুল্লাহ্ মুতাওয়াল্লী ও ঈদগাহ কমিটির যৌথ সিদ্ধান্তে নিয়মিত ইমাম হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২ আগষ্ট মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদকে ইমাম নিয়োগ করা হয়।

কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তের বিস্তির্ণ এলাকার নাম শোলাকিয়া । ঈদগাহকে কেন্দ্র করেই এলাকার নাম হয়েছে শোলাকিয়া। শোলাকিয়া মাঠ এলাকার পুর্ব নাম ছিল ইচ্ছাগঞ্জ। তৎকালে নামাজির সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার। অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লী জামাতে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। সেই থেকেই সোয়ালাখ থেকে সোয়ালাখিয়া উচ্চারণ কালের বিবর্তণে তা হয়েছে শোলাকিয়া। শোলাকিয়া সাহেব বাড়ির পুর্ব পুরুষ শাহ সুফী মরহুম সৈয়দ আহম্মেদ ১৮২৭ খ্রিষ্টাব্দের প্রথমে এ স্থানে সর্বপ্রথম একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন । 

বর্তমানে মাঠে অবস্থান হচ্ছে প্রাচীর ঘেরা একটি মাঠ। যার মূল আয়তন (পশ্চিম প্রান্তে) উত্তর-দক্ষিণে ৩৩৫ ফুট (পূর্ব প্রান্তে) ৩৪১ ফুট এবং উত্তর সীমা রেখায় পূর্ব-পশ্চিমে ৭৮৮ ফুট এবং এবং দক্ষিণ সীমান্ত রেখায় ৯১৪ ফুট রয়েছে। মাঠের ভিতরের মূল জমির পরিমাণ হচ্ছে ৬.৬১ একর। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাঠের উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। অজুখানা, মিম্বর নির্মাণ, মাঠে মাটি কাটা ইত্যাদি উন্নয়ন মূলক কাজ করা হয়েছে। মাঠ এবং মাঠের বাহিরের সকল পতিত জায়গা মিলে বর্তমানে কমপক্ষে তিন লাখ লোক বর্তমানে এ মাঠে ঈদের জামাতে অংশ নেয়। 

শোলাকিয়া ঈদগাহকে শোলাকিয়া আন্তর্জাতিক ঈদগাহ নামকরণ ও মুসল্লীদের সুবিধার্থে মাঠের পরিসর বৃদ্ধি এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন করার দাবি দীর্ঘদিনের।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন