সোমবার, ৫ আগস্ট, ২০১৩

হরতাল ডেকে উচ্চ আদালতের রায় অবমাননা

কিশোরগঞ্জ পাতাঃ উচ্চ আদালত জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছে। প্রতিবাদে ঈদের পরই  ১২ ও ১৩ আগস্ট হরতাল ডেকেছে জামায়াত। আর এ হরতালের যৌক্তিকতা নিয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জামায়াতের হরতাল কমসূচি আদালত অবমাননা। তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও অভিমত প্রকাশ করেছেন অনেকে।

গেল ১ আগস্ট নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণার পর জামায়াত পুনরায় নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল করেছে। আইনি প্রক্রিয়ায় গিয়েও  আদালতের বিরুদ্ধে ‍অবস্থান নিয়েছে জামায়াত। এ নিয়েই এখন দেশজুড়ে আলোচনার  ঝড় উঠেছে।

জামায়াত হরতাল ডাকায় দেশবাসী এখন চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন। জনগণের মধ্যে দেখা দিয়েছে প্রচণ্ড শঙ্কা। শঙ্কার কারণ হচ্ছে,জামায়াতের হরতাল মানেই মানুষ খুন, দেশজুড়ে নৈরাজ্য, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড। আওয়ামী লীগ-বিএনপি যখন বিরোধী দলে ছিল তখনও জনগণ রাজনৈতিক কমসূচি পর্যবেক্ষণ করেছে।

কিন্তু বিএনপি-জামায়াত ও ১৮ দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যে তাণ্ডব ও ধ্বংসযজ্ঞ দেশবাসী দেখছে, গত ৪০ বছরেও তা কেউ প্রত্যক্ষ করেননি।

জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৫ যুদ্ধাপরাধীর বিচার কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে জামায়াত ১০ দিন হরতাল ডেকেছে। সারাদেশে হরতাল ডাকা হয়েছে ১৮ দিন। আর জেলা ও উপজেলায় হরতাল হয়েছে ৩৯ দিন। জামায়াতের সহিংসতায় সারাদেশে নিহত হয়েছেন ৯০ জন। তাদের মধ্যে ১০ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য।

তাই ঈদের পরই হরতাল ডাকায় দেশজুড়ে চরম  আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। হরতালের কারণে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফিরতে চরম বিড়ম্বনায় পড়বেন সাধারণ মানুষ। জ্বালাও-পোড়াও এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে সারাদেশ আবারও অস্থির হয়ে উঠবে।

তাই হরতালের মতো কঠোর কমসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে।
 
জামায়াতের হরতাল কর্মসূচি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বর্তমানে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সেখান থেকে তিনি কিশোরগঞ্জ পাতাকে জানান, জামায়াতের এ  হরতাল কর্মসূচি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। এটি ন্যায় ও সংবিধান সঙ্গত নয়। এটা অবশ্যই আদালত অবমাননার শামিল।

তিনি আরও জানান, জামায়াতের নিবন্ধন হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছে। নিবন্ধন ফিরে পেতে তারা আপিলও করেছে। আইনি প্রক্রিয়ায় গিয়ে তারা হরতাল ডাকতে পারে না।

হরতাল কর্মসূচি ডাকার মাধ্যমে জামায়াত আদালতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাদের এই আদালত অবমাননার বিষয়টি নিশ্চয়ই কেউ ভেবে দেখবেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ড. কামাল হোসেন। 
 
সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত  কিশোরগঞ্জ পাতাকে  জানান, এ হরতালের মাধ্যমে জামায়াত আদালতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আদালতের বিরুদ্ধে কখনও হরতাল হয় না। তাদের এই কর্মসূচি আদালত অবমাননা।

এটি অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধাবিক বলেও  অভিমত প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, ঈদের পর মানুষ কর্মস্থলে ফিরে যাবে। কিন্তু হরতালের কারণে মানুষ কর্মস্থলে ফিরতে চরম বিড়ম্বনায় পড়বেন। হরতালে দেশে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তাই জামায়াতের হরতাল প্রত্যাহার করা উচিত।

জামায়াতের হরতাল  সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান ও প্রতিক্রিয়া জানতে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে একাধিকবার  কল করলেও  তিনি ফোন ধরেননি।

তবে, বিএনপি’র চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে  জানান, জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণায় তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তাই নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে হরতাল ডাকতেই পারে জামায়াত।

তিনি জানান, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে জামায়াতকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এখন প্রতিবাদ না করলে আগামীতে অন্য দলকেও বের করে দেওয়া হতে পারে। তাই জামায়াত এখন অস্তিত্ব রক্ষায় হরতাল ডেকেছে।

আওয়ামী লীগ যদি বিরোধী দলে থাকতে ১৭০ দিন হরতাল ডাকতে পারে, জামায়াত ডাকলে অসুবিধা কোথায়। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল এবং নির্বাচন থেকে দূরে রাখার প্রক্রিয়ায় দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রেসিডিয়াম সদস্য হায়দার আকবর খান রনো  কিশোরগঞ্জ পাতাকে  জানান, এদেশে রাজনীতি করার  অধিকার ‍ নেই জামায়াতের। এটি এখন নিষিদ্ধ এবং সন্ত্রাসী পার্টি। তাই তাদের হরতাল পালনের কোনো বৈধতা নেই।

তিনি  আরও জানান, জামায়াত সারাদেশে সন্ত্রাস করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করছে। তারা মানুষ খুন করছে। তাই তাদের শুধু নিবন্ধন বাতিল করলেই চলবে না। আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে । নইলে জামায়াত আবারও রক্তপিপাসুর ভূমিকায় ‍অবতীর্ণ হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন